🟩 জুমার দিনে কি কি দোয়া পড়তে হয়?

মুসলমানদের জন্য জুমার দিন হলো সপ্তাহের সবচেয়ে বরকতময় ও মর্যাদাশীল দিন। আল্লাহ তাআলা এই দিনে বিশেষ ফজিলত দিয়েছেন এবং কিছু আমল ও দোয়া বিশেষভাবে গ্রহণযোগ্য করেছেন।
হাদিসে জুমার দিনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ আমল ও দোয়ার কথা উল্লেখ রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো আছরের নামাজের পর একাগ্রচিত্তে দোয়া করা, কারণ এই সময় দোয়া কবুলের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।
জুমার দিনটি শুধু মুসলিম সমাজের জন্যই নয়, বরং আল্লাহর বিশেষ রহমতের দিন। এ দিনে এমন একটি অনন্য মুহূর্ত বিদ্যমান থাকে, যখন একজন মুসলিম বান্দা যদি নামাজের মধ্যে দাঁড়িয়ে আল্লাহর কাছে খাস দিলে দোয়া বা কোন অনুরোধ করে, তবে আল্লাহ তা অবশ্যই কবুল করেন।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
“জুমার দিনে এমন একটি সময় রয়েছে, যখন কোনো মুসলিম বান্দা নামাজে দাড়িয়ে আল্লাহর কাছে কোনো দাবি বা দোয়া করলে, আল্লাহ তা তাকে অবিলম্বে দান করেন।”
(সহিহ বুখারী: ৯৩৫)
এই মুহূর্তটি খুঁজে পেয়ে তার সদ্ব্যবহার করা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য অমুল্য উপহার। তাই জুমার দিনের নামাজ ও দোয়ায় মনোযোগী হওয়া ও আল্লাহর দরবারে হৃদয় খুলে প্রার্থনা করা বিশেষ লাভজনক।
🕌 জুমার দিনে দোয়া কবুল হওয়ার সময়
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে:
রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, “জুমার দিনে এমন একটি সময় আছে, সেই সময়টায় যদি কোনো মুসলিম নামাজ আদায় করে এবং আল্লাহর কাছে কিছু চায়, আল্লাহ অবশ্যই তার সে চাহিদা বা দোয়া কবুল করবেন।”
(সহিহ বুখারি: ৬৪০০)
অন্য হাদিসে বলা হয়েছে:
“সেই সময়টি তোমরা আছরের শেষ সময়ে অনুসন্ধান করো।”
(আবু দাউদ: ১০৪৮)
📝 জুমার দিনের গুরুত্বপূর্ণ দোয়া
নিচে তিনটি বিশেষ দোয়া দেওয়া হলো, যা নিয়মিত পাঠ করলে ব্যক্তি দুনিয়া-আখেরাতে কল্যাণ ও বরকত লাভ করতে পারে।
1️⃣ দুনিয়া-আখেরাতে সর্বাধিক কল্যাণ লাভের দোয়া
আরবী:
رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ
উচ্চারণ: রাব্বানা আতিনা ফিদ্ দুনইয়া হাসানাহ, ওয়াফিল আখিরাতি হাসানাহ, ওয়াকিনা আজাবান্নার।
অর্থ: হে আমার প্রভু! আমাকে দুনিয়াতে সুখ দান কর, আখেরাতেও সুখ দান কর এবং আমাকে জাহান্নাম থেকে বাঁচাও।
(সুরা বাকারা: ২০১)
2️⃣ উত্তম জীবন যাপনের দোয়া
আরবী:
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْهُدَى وَالتُّقَى وَالْعَفَافَ وَالْغِنَى
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল হুদা; ওয়াত তুক্বা; ওয়াল আফাফা; ওয়াল গেনা।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে হেদায়াত কামনা করি, ভয় ও তাকওয়া কামনা করি, সতীত্ব ও নৈতিক পবিত্রতা কামনা করি, এবং সম্পদ ও সামর্থ্য কামনা করি।
(মুসলিম: ২৭২১; তিরমিজি: ৩৪৮৯; ইবনে মাজাহ: ৩৮৩২)
3️⃣ মা-বাবাসহ সকল মুমিনের জন্য দোয়া
আরবী:
رَبَّنَا اغْفِرْ لِي وَلِوَالِدَيَّ وَلِلْمُؤْمِنِينَ يَوْمَ يَقُومُ الْحِسَابُ
উচ্চারণ: রব্বানাগ-ফিরলি ওয়ালি ওয়ালিদাইয়্যা ওয়ালিল মুমিনিনা ইয়াওমা ইয়াকুমুল হিসাব।
অর্থ: হে আমাদের পালনকর্তা! আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে এবং সব মুমিনকে সেইদিন ক্ষমা করে দিন; যেদিন হিসাব কায়েম করা হবে।
(সুরা ইবরাহিম: ৪১)
🌿 অতিরিক্ত গুরুত্বপূর্ণ আমল
- জুমার দিন সুরা ক্বলহু বা আয়াতুল কুরসী পড়া – দৈনন্দিন জীবনে হেফাজত ও বরকতের জন্য।
- সালাতুল জুমা সময়মত আদায় করা – সুন্নাহ ও ফরজ নামাজ ঠিক সময়ে আদায় করলে আল্লাহর নৈকট্য বৃদ্ধি পায়।
- দোয়া ও ইস্তেগফার বেশি করা – জুমার দিন ইস্তেগফার পড়া বিশেষভাবে ফজিলতপূর্ণ।
- নফল নামাজ আদায় করা – অতিরিক্ত নফল নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন।
✅ উপসংহার
জুমার দিন মুসলিমদের জন্য এক অনন্য ও বরকতময় দিন। বিশেষ করে আছরের নামাজের পর একাগ্রচিত্তে দোয়া করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে জুমার দিন দোয়া ও আমলগুলো নিয়মিত আদায় করার তাওফিক দান করুন। বিশেষ করে দোয়া কবুলের সময়গুলোতে বেশি বেশি পাঠ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
0 Comments