⚠️ আয়কর রিটার্নের প্রথম পদক্ষেপে এই ৫টি ভুল আপনাকে বিপদে ফেলতে পারে!
🧾 প্রথম আয়কর রিটার্ন: আপনার আর্থিক স্বচ্ছতার প্রথম ধাপঃ

প্রথম আয়কর রিটার্ন দাখিল নিছক একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়—এটি একজন করদাতার আর্থিক স্বচ্ছতার ভিত্তিপ্রস্তর। অনেকে আনন্দের ছলে বা অবহেলায় বিষয়টি গুরুত্ব না দিয়ে পরে জটিলতায় পড়েন। অথচ শুরুতেই সঠিকভাবে পরিকল্পনা করে, নির্ভুল তথ্য ও উপাত্ত দিয়ে রিটার্ন জমা দিলে ভবিষ্যতের রিটার্ন প্রস্তুতি অনেক সহজ ও ঝামেলাহীন হয়।
রিটার্নে আয় দেখানো যেমন অপরিহার্য, তেমনি করদাতার ব্যয়, সম্পদ ও দায়ের বিবরণী তার আয়ের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া উচিত—এটিই স্বাভাবিক এবং প্রত্যাশিত। বিশেষ করে প্রথম রিটার্নে ঘোষিত নীট সম্পদের পরিমাণ পরবর্তী বছরগুলোতে রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তাই শুরু থেকেই সঠিক এবং পরিকল্পিত উপস্থাপন গুরুত্বপূর্ণ।
🧾 প্রথম আয়কর রিটার্ন: আপনার আর্থিক স্বচ্ছতার প্রথম ধাপঃ
প্রমাণপত্র জমা দেওয়া: প্রথম রিটার্ন প্রস্তুতে, আয়ের প্রমাণস্বরূপ যেমন বেতন বিবরণী বা ব্যাংক স্টেটমেন্ট অথবা আয়-ব্যয় বিবরণী (ব্যবসার ক্ষেত্রে) জমা দেওয়া হয়, তেমনি সম্পদ অর্জনের ডকুমেন্ট বা ডিক্লারেশন জমা দেওয়াও শ্রেয়। এতে রিটার্নটি পরিপূর্ণ হয়।
এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, যদি করদাতার টিআইএন পূর্ববর্তী কোনো বছরে গ্রহণ করা হয়ে থাকে, তবে সেই বছরের বা বছরগুলোর রিটার্নও প্রস্তুত করে, প্রয়োজনে জরিমানা ও সুদসহ পরিশোধ করতে হয়। এটি করা না হলে ভবিষ্যতে আইনি জটিলতা তৈরি হতে পারে।
তাই প্রথম রিটার্ন প্রস্তুতের সময় কিছুটা কৌশলী হতে হয় এবং প্রয়োজনে অভিজ্ঞ কোনো কর পরামর্শকের সহায়তা নেওয়া শ্রেয়। মনে রাখতে হবে, আয়কর রিটার্ন শুধু একটি ফর্ম পূরণ নয়—এটি একটি আর্থিক পরিকল্পনা, যা ভবিষ্যতের ভিত্তি গড়ে দেয়।
⚠️ প্রথম আয়কর: রিটার্ন দেবার সময় যে ৫টি বিষয় মনে রাখা আইনি কারণে জরুরি
✅ ১. নগদ টাকা দেখানো
- নগদ আয়ের স্বচ্ছ হিসাব প্রদর্শন
- কর কর্তৃপক্ষের বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন
📊 ২. সঞ্চয়পত্র, এফডিআর, ডিপিএস এবং শেয়ারের তথ্য গোপন করা
- বিনিয়োগ ও আয়ের স্বচ্ছতা বজায় রাখা
- ভবিষ্যতে তদন্ত বা জরিমানার ঝুঁকি হ্রাস
💼 ৩. জমি ও ফ্ল্যাটের বিবরণী না দেওয়া
- ভবিষ্যতের প্রয়োজনে রেফারেন্স হিসেবে কার্যকর
- আয়কর রিটার্নে সম্পদের সঠিক ঘোষণা বাধ্যতামূলক
⚠️ ৪. গাড়ির তথ্য গোপন করা
- গাড়ি ক্রয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ রিটার্ন দেখানো জরুরি
- তথ্য গোপন করলে জরিমানা ও সুদের ঝুঁকি থাকে
🤝 ৫. স্বর্ণালংকারসহ দামি গয়নার তথ্য না দেওয়া
- গয়নার মূল্যায়নে পেশাদার পরামর্শ গ্রহণ করুন
- সঠিক ও পরিকল্পিত তথ্য দিয়ে আয়কর রিটার্ন জমা দিন
প্রথমবার আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার সময় কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মনে রাখা জরুরি। রিটার্ন প্রস্তুতে সম্পদ, দায়-দেনা বা কোনো তথ্য লুকানো ঠিক নয়। কারণ, একবার তথ্য লুকানো হলে পরবর্তী বছরগুলোতে তা আবার রিটার্নে যুক্ত করা খুবই কঠিন হয়ে পড়ে। সাধারণত, উপার্জন বা আয়ের সাথে সম্পদের সম্পর্ক সরাসরি জড়িত।
💼 প্রথমবার রিটার্ন দাখিল? করদাতারা এই ৫টি ভুল করেই বসেন!
১. নগদ টাকা দেখানো

আপনার হাতে যত নগদ টাকা থাকুক না কেন, এর পুরোটাই নির্ভয়ে আয়কর রিটার্নে দেখিয়ে দিন। অনেকেই মনে করেন, নগদ টাকা বেশি দেখালে কর অফিসে ঝামেলায় পড়তে হতে পারে, যা একটি ভুল ধারণা। যদি আপনার আয়ের উৎস বৈধ হয়, তবে নগদ টাকা দেখাতে কোনো সমস্যা নেই।
আয়কর ফরমে 'ক্যাশ ইন হ্যান্ড' (Cash in Hand) ঘরে আপনার নগদ টাকার পরিমাণ উল্লেখ করুন। এটি করার মাধ্যমে আপনার আর্থিক স্বচ্ছতা বজায় থাকবে এবং ভবিষ্যতে কোনো প্রশ্ন উঠলে আপনি এর ব্যাখ্যা দিতে পারবেন।
২. সঞ্চয়পত্র, এফডিআর, ডিপিএস এবং শেয়ারের তথ্য গোপন করা
যদি আপনার আগে কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) না থেকে থাকে এবং আপনি এতদিন আয়কর রিটার্ন জমা না দিয়ে থাকেন, কিন্তু গত কয়েক বছরে আপনি সঞ্চয়পত্র, ডিপিএস, স্থায়ী আমানত (এফডিআর) অথবা শেয়ারে বিনিয়োগ করে থাকেন, তাহলে প্রথমবার রিটার্ন দেওয়ার সময় অবশ্যই এই সব তথ্য উল্লেখ করুন।
এই সম্পদগুলো আয়কর ফরমে 'আর্থিক পণ্য' (Financial Products) খাতে দেখাতে হবে। এগুলো গোপন রাখলে পরবর্তীতে আয়কর বিভাগ থেকে প্রশ্ন আসতে পারে এবং জরিমানার মুখে পড়তে হতে পারে। আপনার সকল আর্থিক বিনিয়োগের তথ্য নির্ভুলভাবে উল্লেখ করা জরুরি।
আয়কর অফিসের নমনীয়তা: প্রথমবার রিটার্ন জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে আয়কর অফিস সাধারণত কিছুটা নমনীয় ও সহায়ক থাকে। যেহেতু এটি করদাতার প্রথম আয়কর রিটার্ন, তাই ভুলত্রুটি হলে তারা কিছুটা ছাড় দিতে পারেন, তবে এর অর্থ এই নয় যে আপনি ভুল তথ্য দেবেন।
৩. জমি ও ফ্ল্যাটের বিবরণী না দেওয়া
আপনার নামে যদি জমি, ফ্ল্যাট অথবা অন্য কোনো স্থাবর সম্পত্তি থাকে, তবে সেই তথ্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) জানানো আপনার দায়িত্ব। এমনকি উত্তরাধিকার সূত্রে অথবা উপহার বা দান হিসেবে পাওয়া সম্পত্তিও রিটার্নে উল্লেখ করতে হবে।
এখানে মনে রাখা দরকার, যদি আপনার মোট সম্পদের পরিমাণ ৫০ লাখ টাকার বেশি হয়, তাহলে রিটার্নে আলাদাভাবে সম্পদের বিস্তারিত বিবরণী জমা দিতে হবে। এই বিবরণী দেওয়ার জন্য আইটি ১০বি (IT 10B) ফরম ব্যবহার করতে হবে। এতে আপনার সকল স্থাবর সম্পদের সঠিক তথ্য অন্তর্ভুক্ত করা অত্যাবশ্যক।
৪. গাড়ির তথ্য গোপন করা
যদি আপনার নামে কোনো গাড়ি, মোটরবাইক অথবা এই ধরনের যানবাহন থাকে, তাহলে তা অবশ্যই আয়কর নথিতে দেখাতে হবে। কারণ, গাড়ির জন্য প্রতি বছর আপনি অগ্রিম আয়কর (Advance Tax) দেন।
বছর শেষে রিটার্ন জমা দেওয়ার সময় যখন কর দেবেন, তখন এই অগ্রিম কর সমন্বয় করতে পারবেন। গাড়ি দেখিয়ে দেওয়া আপনার জন্য লাভজনক, কারণ এটি আপনার সম্পদের একটি অংশ এবং এর মাধ্যমে আপনি কর সমন্বয়ের সুবিধা নিতে পারবেন। সঠিক তথ্য উল্লেখ না করলে ভবিষ্যতে আইনি জটিলতা তৈরি হতে পারে।
নীট আয়ের অতিরিক্ত সম্পদ: নীট আয় বা নীট সঞ্চয়ের অতিরিক্ত সম্পদ অর্জন তখনই সম্ভব যদি করদাতার ক্যাপিটাল গেইন (যেমন - শেয়ার বা সম্পত্তি বিক্রি থেকে লাভ) অথবা দানসূত্রে সম্পদ প্রাপ্তি হয়। এই ধরনের ক্ষেত্রেও সম্পদের উৎস উল্লেখ করা বাধ্যতামূলক।
৫. স্বর্ণালংকারসহ দামি গয়নার তথ্য না দেওয়া
প্রথমবার রিটার্ন দেওয়ার সময় নারী-পুরুষ নির্বিশেষে আপনার কাছে থাকা স্বর্ণালংকার ও অন্যান্য দামি গয়নার তথ্য অবশ্যই উল্লেখ করুন। এমনকি যদি এগুলো উপহার হিসেবে পেয়ে থাকেন, তাহলেও তা দেখাতে হবে।
অনেক নারী করদাতার সোনার গয়নার পাশাপাশি হীরার গয়না অথবা দামি পাথরের গয়না থাকে। প্রথমবার রিটার্ন দেওয়ার সময় এই ধরনের দামি গয়নার তথ্য দিতে ভুলে যাবেন না। এই তথ্যগুলো আপনার সম্পদের অংশ হিসেবে বিবেচিত হবে এবং স্বচ্ছতা বজায় রাখতে সাহায্য করবে।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ও কিছু বাড়তি টিপস:
- সম্পদ অর্জনের যৌক্তিকতা: আপনি প্রথমবার আয়কর রিটার্নে নগদ টাকা এবং অন্যান্য যে সকল সম্পদ দেখাবেন, সেগুলোর উৎস এবং অর্জনের ব্যাখ্যা আপনার কাছে থাকতে হবে। আয়ের উৎসের বিস্তারিত বিবরণী দিতে হবে এবং সকল সম্পদের স্বপক্ষে যথাযথ প্রমাণ সংরক্ষণ করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, একজন করদাতার মাসিক আয় ১,০০,০০০ টাকা হলে বছরে তার আয় ১২,০০,০০০ টাকা। ঐ বছরে তার সম্পদ ততটুকুই বাড়তে বা অর্জন হতে পারে যা তার মোট আয় থেকে তার জীবনযাত্রার ব্যয় বাদ দিলে হয়, অর্থাৎ নীট সঞ্চয়ের সমান (মোট আয় বিয়োগ মোট জীবনযাত্রার ব্যয়)। অতএব, পরবর্তীতে অতিরিক্ত সম্পদ যুক্ত করা মোটেও সহজ কাজ নয়।
- আয়কর অফিসের নমনীয়তা: প্রথমবার রিটার্ন জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে আয়কর অফিস সাধারণত কিছুটা নমনীয় ও সহায়ক থাকে। যেহেতু এটি করদাতার প্রথম আয়কর রিটার্ন, তাই ভুলত্রুটি হলে তারা কিছুটা ছাড় দিতে পারেন, তবে এর অর্থ এই নয় যে আপনি ভুল তথ্য দেবেন।
- নীট আয়ের অতিরিক্ত সম্পদ: নীট আয় বা নীট সঞ্চয়ের অতিরিক্ত সম্পদ অর্জন তখনই সম্ভব যদি করদাতার ক্যাপিটাল গেইন (যেমন - শেয়ার বা সম্পত্তি বিক্রি থেকে লাভ) অথবা দানসূত্রে সম্পদ প্রাপ্তি হয়। এই ধরনের ক্ষেত্রেও সম্পদের উৎস উল্লেখ করা বাধ্যতামূলক।
- প্রমাণপত্র জমা দেওয়া: প্রথম রিটার্ন প্রস্তুতে, আয়ের প্রমাণস্বরূপ যেমন বেতন বিবরণী বা ব্যাংক স্টেটমেন্ট অথবা আয়-ব্যয় বিবরণী (ব্যবসার ক্ষেত্রে) জমা দেওয়া হয়, তেমনি সম্পদ অর্জনের ডকুমেন্ট বা ডিক্লারেশন জমা দেওয়াও শ্রেয়। এতে রিটার্নটি পরিপূর্ণ হয়।
-
জীবনযাপন সংশ্লিষ্ট ব্যয়, পরিসম্পদ ও দায় বিবরণী: সব সময় সব করদাতার জন্য জীবনযাপন সংশ্লিষ্ট ব্যয়, পরিসম্পদ ও দায় বিবরণী জমাদান বাধ্যতামূলক নয়। তবে জেনে রাখা ভালো যে:
- করদাতার সংশ্লিষ্ট আয়বর্ষে মোট আয় ৫ (পাঁচ) লক্ষ টাকার অধিক হলেই কেবল জীবনযাপন সংশ্লিষ্ট ব্যয় বিবরণী জমাদান বাধ্যতামূলক।
- আয়বর্ষের শেষ তারিখে ৪০ (চল্লিশ) লক্ষ টাকার অধিক মোট সম্পত্তির মালিক হলে পরিসম্পদ ও দায় বিবরণী জমাদান বাধ্যতামূলক।
- যদিও বাধ্যতামূলক বা আবশ্যিক না, ঐচ্ছিক ক্ষেত্রেও এগুলো জমাদান আপনার রিটার্নকে অর্থবহ করে তুলবে যা পরবর্তী বছরের রিটার্নগুলো প্রস্তুতে সহায়ক হবে।
- ডকুমেন্ট সংরক্ষণ: আপনার প্রথম আয়কর রিটার্নে জমাকৃত সকল ডকুমেন্ট এবং একটি রিটার্নের কপি একটি ফাইলে সংরক্ষণ করুন। রিটার্ন জমার প্রাপ্তি স্বীকারপত্রটি বর্তমানে ৪৩টি ক্ষেত্রে দাখিল করতে হয়, তাই এটি সযত্নে সংরক্ষণ করা অপরিহার্য।
এই তথ্যগুলো অনুসরণ করে প্রথমবার আয়কর রিটার্ন জমা দিলে তা আপনার জন্য একটি মসৃণ এবং ঝামেলামুক্ত অভিজ্ঞতা হবে।
0 Comments