🟩 সঠিক বয়স কত যখন শরীর ধীরে ধীরে অবনতি শুরু করে

ছোটবেলায় দেহ দ্রুত বেড়ে ওঠে, যৌবনে স্থিতিশীলতা বজায় থাকে, কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে ধীরে ধীরে বার্ধক্যের ছাপ পড়ে। সময় এগোতে থাকে, তবে বার্ধক্যের গতি সব বয়সে সমান থাকে না। কারও ক্ষেত্রে এটি ধীরে ঘটে, আবার কারও ক্ষেত্রে দ্রুত।
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কোষগুলোর পুনরুৎপাদন ক্ষমতা হ্রাস পেতে থাকে, হরমোনের পরিমাণ কমে যায়, এবং দেহের প্রতিরোধক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে শারীরিক শক্তি ও মানসিক উদ্দীপনা কমে যায়, অস্থিসন্ধি ও পেশির কার্যক্ষমতা কমতে থাকে, ত্বকে দেখা দেয় বলিরেখা। এভাবেই বার্ধক্য ধীরে ধীরে দেহ ও মনের ওপর প্রভাব ফেলে এবং জীবনের পরিণতি ঘনিয়ে আসে।
সাম্প্রতিক একটি গবেষণা অনুযায়ী, মানবদেহে বার্ধক্য প্রক্রিয়া সাধারণত ৫০ বছর বয়সের পর দ্রুত গতিতে শুরু হয়, যা শরীর ও টিস্যুগুলোর দ্রুত অবনতি ঘটায়। চাইনিজ একাডেমি অফ সায়েন্সের গবেষকদের মতে, ৫০ বছর বয়স থেকে শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো দ্রুত বার্ধক্যের দিকে অগ্রসর হতে থাকে।
প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই লক্ষণীয়ভাবে হ্রাস পাওয়ার কোনও নির্দিষ্ট বয়স নেই।
কারও কারও ক্ষেত্রে, এটি ৩০-এর দশকের শেষের দিকে বা ৪০-এর দশকের গোড়ার দিকে শুরু হতে পারে, যার মধ্যে শক্তির মাত্রা হ্রাসের মতো সূক্ষ্ম লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
অন্যদের ক্ষেত্রে ৫০-এর দশক বা তারও পরে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন নাও হতে পারে।
স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে যে যৌবনকাল ৩৪ বছর বয়সে শেষ হয়। এই আবিষ্কারটি দেখায় যে, এই বয়স থেকে, আমরা গুরুত্বপূর্ণ কোষীয় পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে শুরু করি যা প্রাপ্তবয়স্কতার সূচনা করে।
'মার্কা'-এর মতে, গবেষণায় দেখা গেছে যে, ৩৪ বছর বয়সের পরে, মানবদেহ কম প্রোটিন উৎপাদন করে, যার ফলে পেশী ভর হ্রাস পায় এবং বিভিন্ন রোগের প্রতি সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি পায়। এই ঘটনাটি তুলে ধরে যে বার্ধক্য হঠাৎ ঘটে না, বরং এটি একটি ধীরে ধীরে প্রক্রিয়া যা পরে ত্বরান্বিত হতে শুরু করে।
গবেষণায় প্রকাশিত জৈবিক পরিবর্তনের পাশাপাশি, জীবনধারা, খাদ্যাভ্যাস এবং ব্যায়ামের মতো বিষয়গুলিও বার্ধক্য প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
স্ট্যানফোর্ডের গবেষণাটি তুলে ধরেছে যে যদিও জীববিজ্ঞান কিছু সীমাবদ্ধতা আরোপ করে, আমাদের অভ্যাস এবং পছন্দগুলি আমাদের বার্ধক্যের অভিজ্ঞতাকে প্রভাবিত করতে পারে।
📚 বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করলেন সঠিক বয়স যখন শরীর ধীরে ধীরে অবনতি শুরু করে
গবেষণায় দেখা গেছে যে, ৫০ বছর বয়সের পর শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও টিস্যুগুলো দ্রুত বুড়ো হতে শুরু করে। এর কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, এই বয়সের পর থেকে শরীরে প্রোটিনের উৎপাদন কমে যায়, যার ফলে পেশি ভর হ্রাস পায় এবং বিভিন্ন রোগের প্রতি সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি পায়।
তবে, বার্ধক্য একটি ধীরে ধীরে প্রক্রিয়া যা বয়সের সাথে সাথে শরীরের বিভিন্ন অংশে প্রভাব ফেলে। এটি হঠাৎ করে শুরু হয় না, বরং একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া।
কিছু বিষয় যা বার্ধক্যের গতিকে প্রভাবিত করতে পারে:
একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় বলা হয়েছে, আমরা যতই বয়স বাড়াই, শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ধীরে ধীরে দুর্বল হতে শুরু করে। বিশেষ করে ৩০ বছর বয়স থেকেই বয়সের প্রভাব শরীরের বিভিন্ন টিস্যুতে লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু ৪৫ থেকে ৫৫ বছর বয়সের মধ্যে এই প্রক্রিয়া দ্রুত বাড়তে শুরু করে।
চীনের গবেষকরা ১৪ থেকে ৬৮ বছর বয়সী ৭৬ জন অঙ্গদাতা থেকে সংগ্রহ করা ৫১৬টি টিস্যু নমুনা বিশ্লেষণ করেছেন পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে। তারা দেখেছেন ৫০ বছর বয়সে বয়স্ক হওয়ার প্রক্রিয়া খুব ত্বরান্বিত হয়।
“এই বিষয়গুলো থেকে আমরা বয়স্কদের স্বাস্থ্য উন্নয়নের জন্য বিশেষ লক্ষ্যভিত্তিক পদক্ষেপ নিতে পারি,” বলেছে গবেষক দল।
কী ধরণের পরিবর্তন দেখা গেছে?
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরে এমন প্রোটিনের সংখ্যা বেড়ে যায়, যেগুলো বিভিন্ন রোগের সঙ্গে যুক্ত। যেমন:
- হার্ট রোগ
- টিস্যু ফাইব্রোসিস
- লিভার টিউমার
বিশেষ করে অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি — যা কিডনির উপরে অবস্থিত এবং শরীরের হরমোন নিয়ন্ত্রণ করে — ৩০ বছর থেকেই প্রোটিন স্তরে পরিবর্তন দেখিয়েছে। তবে প্রকৃত বয়সের প্রভাব ৪৫-৫৫ বছর বয়সে বেশি স্পষ্ট হয়।
সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত অঙ্গ ছিল অর্টা, যা হলো হৃদয়ের বৃহত্তম ধমনী এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত প্রবাহিত করে। গবেষকরা বলছেন, অর্টা সহ রক্তনালীগুলো বয়সের সাথে সবচেয়ে বেশি দুর্বল হয়ে পড়ে।
এই কারণে রক্তনালীগুলোতে একটি প্রোটিনের মাত্রা বেড়ে যায় যাকে বলা হয় GAS6, যা কোষের বৃদ্ধি, টিকে থাকা এবং অভিবাসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। গবেষকরা মনে করেন এই প্রোটিন বয়স্ক হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করতে সহায়তা করে।
বয়স এবং জীবনের গুণগত মান
Nature জার্নালে প্রকাশিত অন্য এক গবেষণায় জানা গেছে, একটি ব্যক্তির বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আলাদা আলাদা গতিতে বয়স্ক হতে পারে। এর ফলে, একটি ‘যৌবনময়’ মস্তিষ্ক বয়সজনিত স্মৃতিভ্রংশের বিরুদ্ধে রক্ষা করতে পারে।
গবেষণায় দেখা গেছে, জীবনের কিছু অভ্যাস বয়স্ক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের স্বাস্থ্য উন্নত করতে সাহায্য করে, যেমন:
- তীব্র ব্যায়াম
- মুরগির মাংস ও তৈলাক্ত মাছ খাওয়া
- মস্তিষ্ক সচল রাখার জন্য শিক্ষা ও জ্ঞান অর্জন
অপরদিকে, ধূমপান, মদ্যপান, প্রক্রিয়াজাত মাংস খাওয়া, ঘুমের অভাব এবং অব্যবস্থাপিত জীবনযাপন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের বয়স বাড়িয়ে দেয়।
বয়স্ক হওয়ার প্রাথমিক পরীক্ষা
সম্প্রতি এক ফিটনেস গুরুর দেয়া ৫টি সহজ পরীক্ষা থেকে বোঝা যায় আপনার শরীর কতটা বয়স গ্রহণ করছে। এগুলো হলো:
- এক পায়ে দাঁড়ানো
- প্ল্যাঙ্ক করা
- চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ানো
- স্কোয়াট করা
- ওজন হিসেবে পানির বোতল চাপা এবং তোয়ালে মোড়ানো
ফিজিওথেরাপিস্ট ক্যারোলাইন ইডিয়েন্স বলেন, “যদি চেয়ার থেকে ওঠার সময় কষ্ট হয়, তবে এটি ইঙ্গিত যে আপনাকে আপনার শরীরের যত্ন নিতে হবে এবং বয়স্ক হওয়ার জন্য প্রস্তুতি শুরু করতে হবে।”
70 বছর বয়সী কি শক্তিশালী হতে পারে?
অনেকেই মনে করেন ৭০ বছর বয়স মানেই দুর্বল শরীর, ধীর গতি, আর শারীরিক সীমাবদ্ধতা। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে—বয়স যতই হোক, শক্তি এবং স্বাস্থ্য ধরে রাখা সম্ভব, যদি আমরা সঠিকভাবে শরীরকে পরিচালনা করি। আধুনিক গবেষণা বলছে, পেশীর ভর ও শক্তি শুধুমাত্র তরুণদেরই সম্পদ নয়; এটি সঠিক অভ্যাস ও ব্যায়ামের মাধ্যমে বয়সের সাথেও বজায় রাখা যায়।
উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক একজন ৭০ বছর বয়সী ট্রায়াথলিটকে, যার পেশীর গঠন ও কার্যক্ষমতা প্রায় ৪০ বছর বয়সী একজন ট্রায়াথলিটের মতোই শক্তিশালী ও ফিট। কীভাবে এটি সম্ভব? এর পেছনে রয়েছে নিয়মিত ওজন প্রশিক্ষণ এবং লক্ষ্যভিত্তিক শক্তিবর্ধক ব্যায়াম। এমন ব্যায়াম শুধু পেশী গঠনেই সাহায্য করে না, বরং তা হাড়ের ঘনত্ব বাড়াতে, ভারসাম্য রক্ষা করতে এবং চোট প্রতিরোধে দারুণভাবে কাজ করে।
পেশীর শক্তি শুধু ফিটনেস বা শরীরচর্চার বিষয় নয়—এটি আমাদের স্বাধীনতা, আত্মবিশ্বাস এবং দৈনন্দিন জীবনের মানের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। বয়স যতই বাড়ুক না কেন, যদি আমরা সঠিক সময়ে শরীরকে গুরুত্ব দিই, তবে ৭০ তো শুধু সংখ্যা। আপনার আজকের চেষ্টাই হতে পারে আগামীর সুস্থ বার্ধক্যের ভিত্তি।
0 Comments