সূচীপত্র (Index) ⤵
✅ জমির দলিলে দাগ, খতিয়ান, মৌজা, চৌহদ্দি বা নামের ভুল যেভাবে সংশোধন করবেন!

জমির দলিলে ভুল সংশোধন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া। অনেক নাগরিক মনে করেন যে একবার জমির দলিল ভুল হলে তা আর সংশোধন করা যায় না, যা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। আসলে, জমির দলিলে যদি কোনো ভুল হয়, তবে সেটি সংশোধন করা সম্ভব। চলুন, জেনে নেওয়া যাক কিভাবে এই ভুল সংশোধন করা যায়।
১. দলিলের ভুল সংশোধন (দাগ, খতিয়ান, মৌজা, ইত্যাদি)
যদি দলিল রেজিস্ট্রির পর দাগ, খতিয়ান, মৌজা, চৌহদ্দি বা নামের বানানে ভুল পাওয়া যায়, তাহলে ৩ বছরের মধ্যে দেওয়ানি আদালতে দলিল সংশোধন মামলা করতে হবে। ৩ বছরের পর এই ধরনের মামলা তামাদির কারণে বারিত হয়ে যায়। তখন ঘোষণামূলক মামলা করা যেতে পারে। এই মামলার রায়ই সংশোধন দলিল হিসেবে গণ্য হবে। (সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন, ৩১ ধারা)
– দলিল সংশোধনঃ
যদি কোনো দলিলে ভুল থাকে, তবে সাধারণত সেটি সংশোধন করার জন্য নির্দিষ্ট সময়সীমা, যেমন ৩ বছর, নির্ধারিত থাকে। এই ৩ বছরের মধ্যে সংশোধন মামলা করতে হবে।
২. সাব-রেজিস্ট্রার কর্তৃক ছোট ভুল সংশোধন
যদি দলিলের ছোট-খাটো ভুল, যেমন দাগ বা নামের বানান ভুল হয়, এবং এই ভুল সংশোধন করলে জমির মালিকানায় কোনো পরিবর্তন আসবে না, তাহলে সংশ্লিষ্ট সাব-রেজিস্ট্রার কাছে আবেদন করা যাবে।
– ঘোষণামূলক মামলাঃ”যদি ৩ বছরের মধ্যে সংশোধন মামলা করা সম্ভব না হয়, তবে ঘোষণামূলক মামলা দায়ের করা যেতে পারে। এর মাধ্যমে আদালত ভুলের বিষয়ে সঠিক রায় প্রদান করতে পারে, যা সংশোধনের মূল দলিল হিসেবে কাজ করবে।“
৩. জমি ক্রয়ের পূর্বে করণীয়
দলিল তৈরির সময় সরকারি নমুনা অনুসরণ করলে ভুলের সম্ভাবনা কমে। দক্ষ ও অভিজ্ঞ দলিল লেখক নির্বাচন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিশ্চিত হয়ে নিন যে, আপনার দলিল লেখক ভূমি অফিসে নিবন্ধিত এবং অনুমোদিত।
- 👉 দলিলের শিরোনাম, সাফ কবলা, বায়নাপত্র ইত্যাদি যাচাই করুন।
- 👉 জমির বিক্রয় মূল্য, পরিমাণ, ও মালিকানার বর্ণনা সঠিকভাবে উল্লেখ করুন।
- 👉 পূর্ববর্তী দলিলের নম্বর এবং খতিয়ানের সঠিক তথ্য জেনে নিন।
- 👉 মৌজা, দাগ নম্বর, খতিয়ানের নাম, জমির শ্রেণী ইত্যাদি সঠিকভাবে উল্লেখ করুন।
ভ্রম সংশোধন দলিল কি?
ভ্রম সংশোধন দলিল হলো একটি আইনি দলিল যা মূল দলিলে থাকা ভুল সংশোধন করার জন্য ব্যবহৃত হয়। যখন কোনো দলিলে নাম, খতিয়ান, সীমানা, বা অন্য কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ভুল থাকে, তখন তা সংশোধন করতে এই ধরনের দলিল তৈরি করা হয়।
ভ্রম সংশোধন দলিলের ব্যবহার:
- সীমানা সংশোধন: জমির সীমানা ভুল থাকলে তা সংশোধন করা।
- নাম বা খতিয়ানের ভুল: মালিকের নাম বা খতিয়ানে ভুল থাকলে তা সংশোধন করা।
- জমির পরিমাণ সংশোধন: জমির পরিমাণে ভুল থাকলে সেটি সংশোধন করা।
দলিল রেজিস্ট্রির পর তাতে দাগ, খতিয়ান, মৌজা, চৌহদ্দি বা নামের বড় ধরনের কোন ভুল ৩ বছরের মধ্যে ধরা পড়লে তা খুব সহজেই ভ্রম সংশোধন করা যায়।
ভ্রম সংশোধন দলিল নমুনা ফরম
বাংলাদেশে আইনগত দলিলের নমুনা ফর্মগুলি সাধারণত জেলা নিবন্ধন অফিস বা অনলাইন নিবন্ধন সিস্টেমের মাধ্যমে পাওয়া যায়। আপনি বাংলাদেশ সরকারের নিবন্ধন অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে গিয়ে প্রয়োজনীয় দলিলের ফর্মগুলি দেখতে এবং ডাউনলোড করতে পারেন।
সাব-রেজিস্ট্রার কর্তৃক দলিলের ভুল সংশোধন
যখন কোনো দলিলের ছোটখাটো ভুল (যেমন নামের বানান, ঠিকানা) থাকে যা দলিলের মূল কাঠামো পরিবর্তন করে না, তখন সাব-রেজিস্ট্রার একটি প্রশাসনিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তা সংশোধন করতে পারেন।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:
- সংশোধিত দলিলের একটি কপি
- সংশোধন করা তথ্যের প্রমাণ (যেমন, জাতীয় পরিচয়পত্র)
- সাব-রেজিস্ট্রারের কাছে সংশোধনের জন্য আবেদন
ভুল সংশোধন দলিলের রেজিস্ট্রি খরচ
দলিল সংশোধন ফি এবং রেজিস্ট্রি খরচ সাধারণত নির্দিষ্ট নিয়ম অনুযায়ী হয়ে থাকে।
- রেজিস্ট্রেশন ফি: ১০০ টাকা।
- স্ট্যাম্প শুল্ক: ৩০০ টাকা।
- হলফনামা: ২০০ টাকার স্ট্যাম্পে।
- এন-ফি: প্রতি ৩০০ শব্দের জন্য ১৬ টাকা (বাংলা)।
সাফ কবলা দলিল বাতিল করা যায় কিনা?
সাধারণত একটি রেজিস্ট্রিকৃত সাফ কবলা দলিল সরাসরি বাতিল করা যায় না। তবে, আইনগত ও যৌক্তিক কারণে বাতিলের প্রয়োজন হলে আদালতে মামলা দায়ের করে বাতিলের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হয়।
যেসব কারণে দলিল বাতিল হতে পারে:
- জালিয়াতি বা ত্রুটি: দলিলে কোনো ধরনের জালিয়াতি বা বড় ভুল থাকলে।
- পারস্পরিক সম্মতি: ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয় পক্ষ সম্মত হলে।
- শর্ত ভঙ্গ: চুক্তির কোনো শর্ত পূরণ না হলে।
দলিল বাতিলের জন্য আদালতে দৃঢ় প্রমাণ দাখিল করতে হয়।
📌 প্রশ্নঃ দলিল সংশোধনের মামলা কত দিনের মধ্যে করতে হয়?
🟢 উত্তরঃ দলিল রেজিস্ট্রির পর কোনো ভুল ধরা পড়লে ৩ বছরের মধ্যে দেওয়ানি আদালতে দলিল সংশোধনের জন্য মামলা করতে হয়।
📌 প্রশ্নঃ রেকর্ড সংশোধন মামলা করতে কত দিন সময় লাগে?
🟢 উত্তরঃ মামলার ধরণ, জটিলতা এবং আদালতের কার্যপ্রণালীর উপর নির্ভর করে সময় পরিবর্তিত হতে পারে। নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা নেই।
0 Comments