দম্পতিরা কি একক মানুষদের চেয়ে বেশি সুখী?
নতুন গবেষণা যা বলছে সম্পর্ক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের গভীরতা নিয়ে
সম্পর্ক বনাম একক জীবন: সুখের খোঁজে
সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় চমকপ্রদ তথ্য উঠে এসেছে: একক মানুষদের তুলনায় দম্পতিরা নাকি বেশি সুখী এবং মানসিকভাবে বেশি সন্তুষ্ট। যদিও বর্তমান সমাজে অনেকেই একা থাকতে পছন্দ করছেন, এই গবেষণাটি সম্পর্কের ইতিবাচক দিকগুলো আবার সামনে নিয়ে এসেছে।
যুক্তরাষ্ট্রে ৯০% মানুষ জীবনের কোনো না কোনো সময় বিয়ে বা গুরুতর সম্পর্কে জড়ান। তবে, আজকাল অনেক প্রাপ্তবয়স্কই দীর্ঘকাল একা থাকাকে বেছে নিচ্ছেন। কিছু গবেষণা দাবি করে যে, এককরাও সঙ্গীযুক্তদের মতোই সুখী হতে পারে, কিন্তু জার্মানির একটি নতুন গবেষণা ভিন্ন চিত্র দেখাচ্ছে।
বিশাল এক জরিপ: ৭৭,০০০ প্রাপ্তবয়স্কের মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ
জার্মানির বিশেষজ্ঞরা ৫০ বছরের বেশি বয়সী ৭৭,০০০ এরও বেশি প্রাপ্তবয়স্কের উপর এই বিশাল গবেষণাটি চালান। তাঁরা অংশগ্রহণকারীদের মানসিক বৈশিষ্ট্য—যাকে মনোবিজ্ঞানীরা 'বিগ ফাইভ' বলেন—সেগুলো বিশ্লেষণ করেছেন। এই 'বিগ ফাইভ' বৈশিষ্ট্যগুলো হলো: এক্সট্রাভার্সন (বহির্মুখীতা), অ্যাগ্রিাবিলিটি (সহানুভূতি), ওপেননেস (খোলামেলা মনোভাব), কনশিয়াসনেস (সচেতনতা), এবং নিউরোটিসিজম (মানসিক অস্থিরতা)।
- যাঁরা কখনোই কোনো গম্ভীর সম্পর্ক বা বিয়ে করেননি, তাঁরা সম্পর্কিত ব্যক্তিদের তুলনায় জীবনে কম সন্তুষ্ট ছিলেন।
- যাঁরা বর্তমানে একা আছেন কিন্তু পূর্বে কোনো সম্পর্কের মধ্যে ছিলেন, তাঁরাও সেইসব একক মানুষদের তুলনায় বেশি সন্তুষ্ট ছিলেন যাঁরা কখনোই কোনো সম্পর্কে জড়াননি।
গবেষণা বলছে, একক ব্যক্তিরা সাধারণত কম এক্সট্রাভার্ট এবং কম ওপেন থাকেন, যার ফলস্বরূপ তাদের সামাজিক জীবন এবং মানসিক স্বাস্থ্যের মান কিছুটা কম হতে পারে।
কেন এই পার্থক্য?
এই গবেষণার ফলাফল এমন এক সময়ে এসেছে যখন অন্যান্য গবেষণাগুলোও দেখাচ্ছে যে, একক মানুষদের মনের অবস্থা বেশি খারাপ হয় এবং তারা বিষণ্নতার ঝুঁকিতে থাকেন। একই সাথে, মানুষ দিন দিন বিয়ে বা সম্পর্কের প্রতি কম আগ্রহী হচ্ছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের জন্মহারেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
গবেষণার প্রধান লেখক জুলিয়া স্টার্ন বলেছেন, "যারা জীবনের পুরোটা সময় একক আছেন এবং যারা সম্পর্ক করেছেন, তাদের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। এর মানে হল যে, আমাদের উচিত এই একক মানুষদের প্রতি আরও মনোযোগী হওয়া।"
গবেষণার অংশ হিসেবে, অংশগ্রহণকারীদের জীবন সন্তুষ্টির বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়, যেখানে ০ মানে 'সম্পূর্ণ অস্বস্তিকর' এবং ১০ মানে 'সম্পূর্ণ সন্তুষ্ট'। এই গবেষণার মধ্যে প্রায় ৫,০০০ (৬%) মানুষ কখনো বিয়ে করেননি, ৩,০০০ (৪%) কখনো পার্টনারের সঙ্গে থাকেননি এবং ২,৪০০ (৩%) কখনো গম্ভীর সম্পর্কেও ছিলেন না।
একক নারী ও প্রবীণদের চিত্র
- গবেষণায় উঠে এসেছে, যারা সারা জীবন একক ছিলেন তারা কম এক্সট্রাভার্ট, কম কনশিয়াস এবং কম ওপেন ছিলেন, আর তারা জীবনে কম সন্তুষ্ট।
- তবে, একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, একক নারীরা একক পুরুষদের তুলনায় বেশি সন্তুষ্ট ছিলেন।
- এছাড়াও, প্রবীণ এককরা তাদের বয়সী মধ্যবয়সী এককদের তুলনায় বেশি সন্তুষ্ট ছিলেন। এর কারণ হলো, বয়স বাড়ার সঙ্গে তারা অন্যদের বিয়ে করা বা সন্তান জন্মদানের সামাজিক চাপ থেকে মুক্ত ছিলেন, যা তাদের পরস্পরের প্রতি ঈর্ষা কমিয়েছে।
সম্পর্কের দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব
গবেষকরা আরও বলেন, সম্পর্কের প্রভাব হয়তো অস্থায়ী হতে পারে। যেমন, একজন এক্সট্রাভার্ট ব্যক্তি যদি একজন ইন্ট্রাভার্টের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান, প্রথমে হয়তো তাদের ব্যক্তিত্ব কিছুটা পরিবর্তিত হয়, তবে সময়ের সাথে তাদের পুরনো ব্যক্তিত্ব ফিরে আসে। এর মানে হলো, মৌলিক ব্যক্তিত্ব বৈশিষ্ট্যগুলো দীর্ঘ মেয়াদে খুব বেশি পরিবর্তিত হয় না, কিন্তু সম্পর্কের কারণে তাৎক্ষণিক আনন্দ ও সন্তুষ্টি বাড়ে।
গবেষণার ফলাফল স্পষ্টভাবে বলছে, সম্পর্কিত ব্যক্তিরা বেশি সন্তুষ্ট থাকতে পারেন কারণ তাদের মানসিক এবং আর্থিক সহায়তা পাওয়ার সুযোগ বেশি থাকে। এই দুটি বিষয় জীবনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
স্টার্ন বলেছেন, "যত বেশি পার্থক্য, তত বেশি তা বৃদ্ধ মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তারা বেশি স্বাস্থ্যগত ও আর্থিক সমস্যার সম্মুখীন হন, এবং এক্ষেত্রে একমাত্র সহায়ক হতে পারে তাদের সঙ্গী।"
"সুখ কারো অবস্থানে নয়, সম্পর্কের মাঝে লুকানো — একাকিত্বে স্বাধীনতা, আর দাম্পত্যে সংযোগ খুঁজে পায় মন।"
0 Comments