🔍 —বিশেষজ্ঞদের মতে এই কারণ সবচেয়ে ভয়ানক"

রাতে ঘুমাতে গেলেন, কিন্তু আর জেগে উঠলেন না! ভাবতেই গা শিউরে ওঠে, তাই না? অথচ অনেকেই এমন করেই মৃত্যুবরণ করেন—শান্ত ঘুমের মধ্যেই নিঃশব্দে শেষ হয়ে যায় তাদের জীবন। বিষয়টি শুনতে যতটা রহস্যময় লাগে, এর পেছনে রয়েছে বৈজ্ঞানিক ও শারীরিক কিছু বাস্তব কারণ।
কারো কারো ক্ষেত্রে এটি হতে পারে হার্টের সমস্যার কারণে, আবার কেউ কেউ আক্রান্ত হন নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো গুরুতর সমস্যায়।
আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা জানবো সেই ভয়ংকর কারণ যা একজন মানুষকে ঘুমের মধ্যেই চিরঘুমে পৌঁছে দিতে পারে। আপনি যদি নিজেকে ও প্রিয়জনকে সচেতন রাখতে চান, তবে এই তথ্যগুলো একবার চোখ বুলিয়ে নেয়া অত্যন্ত জরুরি।
"ঘুম — যেখানে আমরা সবচেয়ে নিরাপদ বোধ করি, সেখানেই লুকিয়ে থাকতে পারে নীরব মৃত্যু! অবাক করা এই কারণগুলো জানলে আপনি আজ থেকেই সতর্ক হতে বাধ্য হবেন।"
✅ ঘুমের মধ্যে মৃত্যুর কারণসমূহ জেনে নিন, না জেনে ঝুঁকি নিচ্ছেন কি?"
অনেকেই বিস্ময়ে পড়েন, কেন কিছু মানুষ ঘুমন্ত অবস্থায় মারা যান। এই মৃত্যুগুলোর পেছনে থাকে একাধিক শারীরিক ও পরিবেশগত কারণ। নিচে ঘুমের মধ্যে মৃত্যুর সম্ভাব্য কারণগুলো ব্যাখ্যাসহ উপস্থাপন করা হলো:
1. Cardiac Arrest (হৃদযন্ত্রের আকস্মিক বন্ধ হওয়া)

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট (Cardiac Arrest) হলো হৃদযন্ত্রের একটি আকস্মিক এবং মারাত্মক অবস্থা, যেখানে হৃদপিণ্ড শরীরের বাকি অংশে কার্যকরভাবে রক্ত পাম্প করা বন্ধ করে দেয়। এর ফলে ব্যক্তি সংজ্ঞা হারায় এবং দ্রুত চিকিৎসা না পেলে মৃত্যুও হতে পারে। এটি হার্ট অ্যাটাক থেকে ভিন্ন, কারণ হার্ট অ্যাটাক হলো হৃদপিণ্ডের একটি অংশে রক্ত প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়া, যেখানে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলো হৃদযন্ত্রের কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যাওয়া।
Cardiac arrest তখন ঘটে যখন হৃদপিণ্ড হঠাৎ করে রক্ত সঞ্চালন বন্ধ করে দেয়। ঘুমের মধ্যে এ ধরনের ঘটনা প্রায়ই মরণঘাতী হয় কারণ তৎক্ষণাৎ চিকিৎসা পাওয়া সম্ভব হয় না।
ঘুমের মধ্যে এই ধরনের অ্যারেস্ট ঘটে গেলে অনেক সময় কেউ টেরই পায় না। যদি কেউ ওই সময় পাশে না থাকে, বা ইমারজেন্সি রেসপন্স না আসে, তবে মুহূর্তেই মৃত্যু হতে পারে। তাই যারা হৃদরোগে ভুগছেন, তাদের জন্য ঘুমের আগে নিয়মিত ওষুধ খাওয়া এবং পর্যাপ্ত পর্যবেক্ষণ গুরুত্বপূর্ণ।
2. Arrhythmias (অনিয়মিত হৃদস্পন্দন)

অনিয়মিত হৃদস্পন্দন বা Arrhythmia হলো এমন এক অবস্থা যেখানে হৃদপিণ্ডের স্বাভাবিক স্পন্দনের তাল ছিন্ন হয়ে যায়। হৃদস্পন্দন অনেক সময় খুব ধীরে (Bradycardia), আবার কখনো খুব দ্রুত (Tachycardia) হতে পারে, যা রক্ত সঞ্চালনকে ব্যাহত করে। ঘুমের মধ্যে যদি এই অনিয়মিত স্পন্দন হঠাৎ করে মারাত্মক মাত্রায় পৌঁছায়, তবে তা কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের দিকে নিয়ে যেতে পারে।
বিশেষ করে যাদের হৃদপিণ্ড দুর্বল বা আগে থেকেই হার্ট ব্লক, ইলেক্ট্রোলাইট ইমব্যালান্স, অথবা জেনেটিক কোনো কার্ডিয়াক স্নায়বিক সমস্যা রয়েছে, তাদের মধ্যে এই ধরনের অ্যারিদমিয়া ঝুঁকি বহুগুণে বেড়ে যায়। সমস্যা হলো, ঘুমের মধ্যে শরীর বিশ্রামে থাকায় অনেক সময় এই পরিবর্তনগুলো লক্ষ করা কঠিন হয়, ফলে তা সরাসরি মৃত্যুর কারণও হতে পারে।
অনিয়মিত হৃদস্পন্দনের কিছু লক্ষণ যেমন বুকে ধড়ফড় করা, মাথা ঘোরা, ঘন ঘন নিঃশ্বাসের প্রয়োজন — ঘুমের সময় অনুপস্থিত থাকলেও, দিনের বেলায় তা শনাক্ত করা এবং নিয়মিত হার্ট চেকআপ করা অত্যন্ত জরুরি। বিশেষত যদি এটি ভেন্ট্রিকুলার ফিব্রিলেশন টাইপের হয়, যা ঘুমের সময় cardiac arrest-এর কারণ হতে পারে।
3. Congestive Heart Failure (হৃদযন্ত্রের অক্ষমতা)
Congestive Heart Failure (CHF), বাংলায় যাকে বলা হয় হৃদযন্ত্রের অক্ষমতা, হলো এমন একটি দীর্ঘমেয়াদি অবস্থা যেখানে হৃদপিণ্ড পর্যাপ্ত পরিমাণে রক্ত পাম্প করতে ব্যর্থ হয়। এর ফলে শরীরে রক্ত এবং তরল জমা হতে থাকে—ফুসফুস, পা বা পেটের চারপাশে ফোলাভাব দেখা দিতে পারে, আর নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়।
ঘুমের সময় শরীর বিশ্রামরত অবস্থায় থাকে, ফলে হৃদপিণ্ডের দুর্বলতা আরও প্রকট হতে পারে। বিশেষ করে রাতে শোয়ার পর যদি ফুসফুসে তরল জমে যায়, তাহলে তা শ্বাসকষ্ট তৈরি করতে পারে এবং এতে করে হঠাৎ করে নিঃশ্বাস বন্ধ হওয়া বা মৃত্যুও ঘটতে পারে। অনেক সময় CHF আক্রান্ত ব্যক্তিরা রাতে হঠাৎ উঠে শ্বাস নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন—যা এক ধরনের সতর্ক সংকেত।
এই রোগ ধীরে ধীরে গড়ে উঠলেও, ঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ না করা হলে এটি প্রাণঘাতী হতে পারে। তাই উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, বা হার্ট অ্যাটাকের ইতিহাস থাকলে সময়মতো চিকিৎসা নেওয়া এবং জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনা অত্যন্ত জরুরি।
4. Stroke (স্ট্রোক)

স্ট্রোক ঘটে তখন, যখন মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যায় অথবা রক্তনালী ফেটে যায়। এর ফলে মস্তিষ্কের কোষে অক্সিজেন ও পুষ্টির অভাব দেখা দেয়, যা দ্রুত কোষমৃত্যু ডেকে আনতে পারে। যদি এই ঘটনা ঘুমের মধ্যে ঘটে, তাহলে আশপাশে কেউ না থাকলে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা পাওয়া কঠিন হয়ে যায় এবং মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে।
স্ট্রোক সাধারণত দুই ধরনের হয়: Ischemic Stroke (রক্ত জমাট বেঁধে রক্তপ্রবাহ বন্ধ হওয়া) ও Hemorrhagic Stroke (রক্তনালী ফেটে রক্তপাত)। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, অতিরিক্ত ওজন, ধূমপান এবং উচ্চ কোলেস্টেরল—এই সমস্ত কারণগুলো স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে।
অনেক সময় ঘুমানোর সময় স্ট্রোকের লক্ষণ ধরা পড়ে না, ফলে সকালে আর জাগা হয় না। বিশেষজ্ঞরা বলেন, যারা হাই রিস্ক গ্রুপে পড়েন (যেমন: উচ্চ রক্তচাপ বা হার্টের সমস্যা রয়েছে), তাদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও রাতের ঘুমে পর্যবেক্ষণ অত্যন্ত জরুরি। কারণ ঘুমের মধ্যেও স্ট্রোক হতে পারে এবং সেটি নীরবে প্রাণ কেড়ে নিতে পারে।
মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ হঠাৎ বন্ধ হলে বা অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হলে স্ট্রোক হয়। অনেক সময় ঘুমন্ত অবস্থায় স্ট্রোক ঘটে থাকে, যেটি সময়মতো চিকিৎসা না পেলে মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
5. Respiratory Arrest (শ্বাসপ্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া)

Respiratory arrest হলো এমন একটি মারাত্মক অবস্থা, যখন একজন মানুষের শ্বাসপ্রশ্বাস সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যায়। শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ থেমে যাওয়ায় মস্তিষ্ক ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যদি এই ঘটনা ঘুমের মধ্যে ঘটে, তবে আশেপাশে কেউ না থাকলে তাৎক্ষণিক সাড়া পাওয়া সম্ভব হয় না—ফলে নিঃশব্দেই মৃত্যু ঘটে যেতে পারে।
ঘুমের সময় Respiratory arrest ঘটার অন্যতম কারণ হতে পারে Obstructive Sleep Apnea, ওষুধ বা অ্যালকোহলের অতিরিক্ত ব্যবহার, মস্তিষ্কের আঘাত, কিংবা স্নায়বিক সমস্যা। যাদের ফুসফুস দুর্বল বা আগে থেকে শ্বাসকষ্টজনিত রোগ রয়েছে (যেমন: COPD, Asthma), তাদের জন্য এই ঝুঁকি আরও বেশি।
এই কারণে ঘুমের মধ্যে শ্বাস-প্রশ্বাসে অনিয়ম বা দীর্ঘ সময় নিঃশ্বাস বন্ধ থাকা কখনোই অবহেলা করা উচিত নয়। প্রয়োজনে ঘুমের ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে Sleep Study করানো যেতে পারে, যা নিঃশ্বাসের সমস্যাগুলো শনাক্ত করতে সাহায্য করে।
Respiratory arrest ঘটে যখন শ্বাসপ্রশ্বাস পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এটা ঘুমের সময় হলে, কারও বোঝা বা সাড়া দেবার আগেই মৃত্যু হতে পারে।
6. Type 1 Diabetes (টাইপ ১ ডায়াবেটিস)
টাইপ ১ ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে একটি ভয়ঙ্কর ঝুঁকি হলো রাতের ঘুমের মধ্যে হাইপোগ্লাইসেমিয়া, অর্থাৎ রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা অতিমাত্রায় কমে যাওয়া। এই অবস্থা অতিমাত্রায় মারাত্মক হতে পারে যদি ঘুমের মধ্যে তা অনুভব না করা যায় এবং যথাসময়ে চিকিৎসা না হয়।
এই ধরণের মৃত্যু বিশেষভাবে পরিচিত “Dead-in-Bed Syndrome” নামে, যেখানে সাধারণত তরুণ, সুস্থ ও নিয়ন্ত্রিত টাইপ ১ ডায়াবেটিস রোগীরা রাতের ঘুমে হঠাৎ করেই মারা যান, কোনো দৃশ্যমান কারণ ছাড়াই।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ইনসুলিনের অতিরিক্ত ডোজ, দেরিতে খাবার খাওয়া বা ব্যায়ামের পরপর ইনসুলিন নেওয়া—এইসব কারণে হাইপোগ্লাইসেমিয়া বাড়ে এবং তা ঘুমের মধ্যে বিপদজনক মাত্রায় পৌঁছাতে পারে। যারা একা ঘুমান, তাদের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি আরও বেশি, কারণ কারও দৃষ্টি বা সহায়তা না পেলে চিকিৎসার সুযোগ থাকে না।
তাই টাইপ ১ ডায়াবেটিস রোগীদের উচিত ঘুমাতে যাওয়ার আগে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা পরীক্ষা করা এবং ইনসুলিন ব্যবস্থাপনায় সতর্ক থাকা। আজকাল বাজারে এমন স্মার্ট ডিভাইসও রয়েছে যা রাতে হাইপোগ্লাইসেমিয়ার সতর্কতা দিয়ে জাগিয়ে দিতে পারে।
7. Carbon Monoxide Poisoning (কার্বন মনোক্সাইড বিষক্রিয়া)
কার্বন মনোক্সাইড (CO) একটি অতিমারাত্মক গ্যাস, যা দেখতে, গন্ধ পেতে বা স্বাদ নিতে একেবারে অসম্ভব — এ কারণেই একে বলা হয় "Silent Killer"। যখন কেউ এই গ্যাসে আক্রান্ত হন, তখন তা ফুসফুসের মাধ্যমে রক্তে প্রবেশ করে এবং অক্সিজেন পরিবহনে বিঘ্ন ঘটায়। এর ফলে শরীরের কোষগুলো পর্যাপ্ত অক্সিজেন পায় না, এবং ধীরে ধীরে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ অচল হয়ে পড়ে।
সবচেয়ে বিপজ্জনক বিষয় হলো, যদি এটি ঘুমের মধ্যে ঘটে — যেমন বন্ধ ঘরে গ্যাস হিটার, জেনারেটর বা ধোঁয়া নির্গমনের ব্যবস্থা না থাকলে — মানুষ বুঝতেই পারে না, আর জেগে ওঠার আগেই মৃত্যু ঘটে যেতে পারে। অনেক সময় পরিবারের একাধিক সদস্য একসাথে আক্রান্ত হন ঘুমন্ত অবস্থায়, যা এই বিষক্রিয়ার ভয়াবহতা আরও বাড়িয়ে তোলে।
এই কারণে ঘরে কার্বন মনোক্সাইড ডিটেক্টর স্থাপন করা অত্যন্ত জরুরি, বিশেষ করে যেখানে রান্নার গ্যাস, হিটার বা ইঞ্জিনচালিত যন্ত্র ব্যবহার করা হয়। একটু সচেতনতা জীবন বাঁচাতে পারে।
কার্বন মনোক্সাইড একটি রঙ ও গন্ধহীন গ্যাস, যা ফুসফুস দিয়ে রক্তে ঢুকে অক্সিজেন পরিবহন বাধাগ্রস্ত করে। অনেক সময় ঘুমন্ত অবস্থায় মানুষ টের না পেয়ে মারা যান।
8. Medications (ঔষধ বা সেডেটিভের প্রভাব)
ঘুমের সমস্যা বা মানসিক চাপ দূর করার জন্য অনেকেই সেডেটিভ, ট্রাঙ্কুইলাইজার বা ঘুমের ওষুধ গ্রহণ করে থাকেন। যদিও এসব ওষুধ শরীরকে শান্ত ও নিদ্রালু করতে সহায়তা করে, তবে ভুল মাত্রা বা একাধিক ওষুধ একসাথে সেবনের ফলে তা সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেম-কে মারাত্মকভাবে দমন করতে পারে।
এর ফলে শ্বাসপ্রশ্বাসের হার কমে যায়, এবং ঘুমন্ত অবস্থায় দেহ পর্যাপ্ত অক্সিজেন পায় না। যদি কেউ একা ঘুমিয়ে থাকে বা আশেপাশে কেউ না থাকে, তাহলে সময়মতো চিকিৎসা না পেয়ে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে।
বিশেষ করে যখন অ্যালকোহল বা অন্যান্য ড্রাগের সাথে এসব ঘুমের ওষুধ একসাথে গ্রহণ করা হয়, তখন বিপদের সম্ভাবনা বহুগুণ বেড়ে যায়। তাই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কখনোই এসব ওষুধ গ্রহণ করা উচিত নয় এবং দীর্ঘ সময় ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
নিদ্রা আনয়নের জন্য ব্যবহৃত সেডেটিভ বা অন্যান্য ঔষধ শ্বাসপ্রশ্বাস কমিয়ে দিতে পারে। অতিরিক্ত মাত্রা বা একাধিক ড্রাগ মিশে মারাত্মকভাবে সেন্ট্রাল নার্ভ সিস্টেমকে দমন করতে পারে, যা মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
9. Brain Trauma (মস্তিষ্কে আঘাত)

মস্তিষ্কে আগের কোনো চোট বা রক্তক্ষরণ অনেক সময় ঘুমের সময় নিঃশব্দে প্রাণঘাতী জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে যখন মাথার ভেতরে চাপ, অর্থাৎ Intracranial Pressure, অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়, তখন তা মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত করে।
এই ধরনের চাপ মস্তিষ্কের স্টেম-এ প্রভাব ফেললে, তা শ্বাসপ্রশ্বাস এবং হৃদস্পন্দনের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্বায়ত্তশাসিত কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে পারে। ঘুমন্ত অবস্থায় এসব পরিবর্তন বোঝা কঠিন হওয়ায়, জরুরি চিকিৎসা ছাড়াই মৃত্যু ঘটে যেতে পারে।
অনেক সময় মানুষ বুঝতেও পারে না যে তাদের মাথায় পুরনো কোনো ইনজুরি রয়েছে, বিশেষ করে যদি তা ছোট বা অবহেলিত হয়। তাই মাথায় আঘাত লাগার পর—even যদি তা হালকা মনে হয়—এক্স-রে বা সিটি স্ক্যান করে দেখা এবং পর্যবেক্ষণে রাখা অত্যন্ত জরুরি। কারণ এই আঘাত ভবিষ্যতে ঘুমের মধ্যে নিঃশব্দ মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
মস্তিষ্কে আগের কোনো চোট বা রক্তক্ষরণ ঘুমের সময় জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষ করে intracranial pressure বেড়ে গেলে। এটি নিঃশব্দে মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
10. Choking (চোক করে মৃত্যু)
চোকিং বা শ্বাসনালীতে খাদ্য বা অন্য কোনো বস্তু আটকে যাওয়া এমন একটি বিপজ্জনক অবস্থা, যা ঘুমের মধ্যেও প্রাণঘাতী হতে পারে। বিশেষ করে যারা ঘুমানোর আগে বেশি খেয়ে শুয়ে পড়েন, বা যাদের গলায় খাবার আটকে যাওয়ার সমস্যা রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি বেশি।
ঘুমের সময়, শরীরের সচেতন প্রতিক্রিয়া কমে যায়, ফলে কেউ যদি বমি বা খাবারের কণা শ্বাসনালিতে টেনে নেয়, তা শ্বাসরোধ করে হঠাৎ মৃত্যুর কারণ হতে পারে। এই ধরণের ঘটনা অনেক সময় 'silent aspiration' হিসেবেও পরিচিত, যেখানে ব্যক্তি জানতেই পারেন না যে কিছু গলায় আটকে গেছে।
বিশেষ করে শিশু, বয়স্ক ব্যক্তি, অ্যালকোহল গ্রহণকারী বা স্নায়বিক দুর্বলতা আছে এমনদের মধ্যে এই ঘটনা বেশি দেখা যায়। তাই ঘুমানোর অন্তত ২-৩ ঘণ্টা আগে খাওয়া শেষ করা, ধীরে ধীরে চিবিয়ে খাওয়া, এবং সমস্যা থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ঘুমন্ত অবস্থায় বমি, খাবারের কণা বা অন্যান্য কারণে শ্বাসনালী বন্ধ হয়ে গেলে তা শ্বাসকষ্ট ও মৃত্যুর কারণ হতে পারে। বিশেষ করে অ্যালকোহলের প্রভাবে এটি বেশি ঘটে।
11. Epilepsy (মৃগী বা খিঁচুনি)
Epilepsy বা মৃগী এমন একটি স্নায়ুবিক অবস্থা, যেখানে মস্তিষ্কের বৈদ্যুতিক সংকেতের ব্যাঘাতের ফলে খিঁচুনি বা অজ্ঞান হওয়ার মতো উপসর্গ দেখা দেয়। এই রোগের সঙ্গে সম্পর্কিত সবচেয়ে ভয়ানক ঘটনা হলো SUDEP — Sudden Unexpected Death in Epilepsy। এটি এমন একটি অবস্থা, যেখানে মৃগী আক্রান্ত ব্যক্তি ঘুমন্ত অবস্থায় হঠাৎ মৃত্যুবরণ করেন।
SUDEP-এর প্রধান কারণ হিসেবে ধরা হয় খিঁচুনির সময় শ্বাসরোধ, অথবা খিঁচুনিজনিত কারণে হৃদযন্ত্রের স্বাভাবিক ছন্দ বিঘ্নিত হওয়া। এই ধরণের মৃত্যু সাধারণত রাতের বেলা বা একাকী ঘুমের সময় ঘটে, এবং তা এত দ্রুত হয় যে পাশে কেউ থাকলেও অনেক সময় বুঝে ওঠা যায় না।
SUDEP প্রতিরোধে নিয়মিত ওষুধ গ্রহণ, খিঁচুনি নিয়ন্ত্রণে রাখা, এবং রাতে ঘুমানোর সময় কারো উপস্থিতি বা স্মার্ট অ্যালার্ম ডিভাইস ব্যবহার সহায়ক হতে পারে। মৃগী রোগীদের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যঝুঁকি, যার ব্যাপারে রোগী ও পরিবারের সচেতনতা থাকা অত্যন্ত জরুরি।
SUDEP (Sudden Unexpected Death in Epilepsy) নামে একটি অবস্থা রয়েছে যেখানে মৃগী রোগীরা ঘুমন্ত অবস্থায় হঠাৎ মৃত্যুবরণ করেন। এটি সাধারণত খিঁচুনিজনিত শ্বাসরোধ বা হৃদযন্ত্রের ব্যাঘাতজনিত কারণে ঘটে।
12. Obstructive Sleep Apnea (নিদ্রাজনিত শ্বাসকষ্ট)
Obstructive Sleep Apnea বা নিদ্রাজনিত শ্বাসকষ্ট হলো একটি গুরুতর ঘুমের রোগ, যেখানে ঘুমের সময় শ্বাসনালী আংশিক বা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে শরীর পর্যাপ্ত অক্সিজেন পায় না এবং শ্বাসকষ্টের ফলে হৃদস্পন্দন দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে। এই অবস্থা দীর্ঘস্থায়ী হলে, হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, এবং অন্যান্য হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা ঘুমের সময় বারবার শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে ঘুমের গুণগত মান নষ্ট হয়, যা দিনের সময় ক্লান্তি, ঘুমের অভাব এবং মনোযোগের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। চিকিৎসা না করলে, দীর্ঘমেয়াদী জটিলতা হতে পারে। তাই নিদ্রাজনিত শ্বাসকষ্টের সঠিক চিকিৎসা এবং নিয়মিত পর্যবেক্ষণ অত্যন্ত জরুরি।
রিসার্চ অনুসারে, এই রোগের জন্য জীবনযাত্রার পরিবর্তন যেমন ওজন কমানো, সঠিক ঘুমের পজিশন নেওয়া এবং প্রয়োজনে CPAP মেশিন ব্যবহার করতে হতে পারে। যদি আপনি বা আপনার পরিচিত কেউ রাতে হঠাৎ শ্বাস নিতে কষ্ট পান বা ঘুমের সময় হঠাৎ ঘুম ভেঙে যায়, তবে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
এই অবস্থায় ঘুমের সময় শ্বাসনালী আংশিক বা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এতে শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায় এবং হৃদস্পন্দন বেড়ে গিয়ে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক হতে পারে।
13. Other Sleep Disorders (অন্যান্য নিদ্রা-সংক্রান্ত সমস্যা)

Sleep disorders যেমন Central Sleep Apnea, REM Sleep Behavior Disorder, বা Parasomnias (যেমন ঘুমের মধ্যে হাঁটা, কথা বলা ইত্যাদি) শরীরের স্বাভাবিক ঘুমচক্রে ব্যাঘাত ঘটায়। এতে হঠাৎ শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া, অস্বাভাবিক আচরণ বা শারীরিক বিপদের আশঙ্কা বাড়ে।
একটি বিশেষ বিষয় হলো Pseudo-suicides, যা ঘুমের মধ্যে ঘটে যাওয়া আত্মঘাতী কার্যকলাপের অনিচ্ছাকৃত রূপ। ঘুমের মধ্যে হাঁটা (Sleepwalking) অবস্থায় মানুষ কখনো কখনো নিজের ক্ষতি করে ফেলতে পারেন, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
২০০৩ সালের এক গবেষণা অনুসারে, এধরনের ঘটনা “unfortunate, but unintentional, consequence of sleep-related complex behaviors and therefore are without premeditation, conscious awareness, or personal responsibility।” অর্থাৎ এগুলো পূর্ব পরিকল্পিত নয়, ব্যক্তি সচেতনও থাকেন না এবং তারা নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন।
উপসংহার
ঘুমের মধ্যে মৃত্যুর পেছনে থাকতে পারে হৃদরোগ, শ্বাসকষ্ট, খিঁচুনি, ডায়াবেটিস, বিষক্রিয়া কিংবা স্নায়বিক জটিলতা। এই সকল ঝুঁকির কারণে প্রতিটি ব্যক্তির উচিত তার স্বাস্থ্যগত অবস্থা সম্পর্কে সচেতন থাকা, নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া এবং ঘুমের পরিবেশ সুরক্ষিত রাখা।
সাডেন অ্যারিদমিক ডেথ সিনড্রোম (SADS) কী?
সাডেন অ্যারিদমিক ডেথ সিনড্রোম (SADS) হলো এক ধরনের হঠাৎ মৃত্যু, যেখানে সুস্থ ও সক্রিয় মানুষদের ঘুমের মধ্যে বা বিশ্রামের সময় হার্টের হঠাৎ ছন্দপতনের (Arrhythmia) কারণে মৃত্যু ঘটে—কোনো দৃশ্যমান উপসর্গ ছাড়াই।
এটি বিশেষ করে তরুণ ও মধ্যবয়সী পুরুষদের মধ্যে বেশি দেখা যায় এবং প্রায়শই পারিবারিক ইতিহাস কিংবা জেনেটিক ফ্যাক্টরের সঙ্গে সম্পর্কিত হয়ে থাকে।
লক্ষণ সাধারণত থাকে না!
এই অবস্থার সবচেয়ে ভয়াবহ দিক হলো—মৃত্যুর পূর্বে কোনো সুস্পষ্ট লক্ষণ দেখা দেয় না। অনেক সময় হালকা মাথাঘোরা, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, অথবা বুক ধড়ফড় করার মতো সামান্য উপসর্গ দেখা দিলেও তা গুরুত্বসহকারে নেওয়া হয় না।
SADS: কারণ ও ঝুঁকি ফ্যাক্টর
SADS-এর কারণ ও ঝুঁকিগুলি বুঝে সচেতন হওয়াই প্রতিরোধের প্রথম ধাপ। যদিও এর মূল কারণ হৃদয়ের বৈদ্যুতিক ছন্দের গোলযোগ, তবে নিচের বিষয়গুলো তা ট্রিগার করতে পারে:
- ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্যহীনতা: পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামের মাত্রা কমে গেলে বা বেড়ে গেলে হৃদস্পন্দন ব্যাহত হতে পারে।
- ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: কিছু ওষুধ বা অবৈধ ড্রাগ হার্টের বৈদ্যুতিক সংকেতের উপর প্রভাব ফেলে।
- হার্টের গঠনগত অস্বাভাবিকতা: যদিও সাধারণত এটি গঠনগত ত্রুটি ছাড়া ঘটে, তবে সূক্ষ্ম বা অজানা ত্রুটি থেকেই বিপদ হতে পারে।
- জেনেটিক সমস্যা: পরিবারে কেউ হঠাৎ হার্ট অ্যাটাকে মারা গেলে, জেনেটিক কার্ডিয়াক সিনড্রোমের আশঙ্কা থাকে।
SADS ঝুঁকি ফ্যাক্টর:
- পারিবারিক ইতিহাস: পরিবারের সদস্যদের মধ্যে অল্প বয়সে হঠাৎ মৃত্যু হলে নিজেকে ঝুঁকিপূর্ণ ধরে নেওয়া উচিত।
- বয়স ও লিঙ্গ: তরুণ পুরুষদের মধ্যে এই সমস্যাটি তুলনামূলক বেশি দেখা যায়।
- জীবনযাপনের ধরন: চরম পরিশ্রম, প্রতিযোগিতামূলক খেলা বা স্ট্রেস হার্টের চাপ বাড়িয়ে দিতে পারে, যা অ্যারিদমিয়া সক্রিয় করে তোলে।
প্রতিদিনের স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ এবং প্রয়োজনীয় মেডিকেল স্ক্রিনিংই হতে পারে SADS থেকে রক্ষার সবচেয়ে কার্যকর উপায়।
তথ্যসূত্র: Mayo Clinic, British Heart Foundation, American Heart Association
0 Comments