প্রতিটি মানুষই চায় তার সংসার হোক সুখী, শান্তিপূর্ণ এবং উন্নত। কিন্তু শুধু চাওয়া নয়, এর জন্য প্রয়োজন সঠিক মানসিকতা ও আচরণ। দুঃখজনকভাবে, আমরা অনেক সময় নিজের অজান্তেই এমন কিছু স্বভাব ধারণ করি—যেগুলো আমাদের সংসারকে ধীরে ধীরে টেনে নিয়ে যায় ভাঙনের পথে। রাগ, অহংকার, সন্দেহ কিংবা দায়িত্বহীনতা—এসব ছোট ছোট নেতিবাচক অভ্যাসই হয়ে উঠতে পারে বড় বিপদের কারণ।
এই লেখায় আমরা আলোচনা করব এমন ৭টি স্বভাব সম্পর্কে, যেগুলো সংসারের উন্নতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় এবং যেগুলো বদলানো জরুরি, যদি আপনি চান একটি সুখী ও টেকসই দাম্পত্য জীবন।
কথায় আছে ৪০ বছর বয়সে পুরুষের নতুন করে জীবন শুরু হয়। মহা মানব ও মনীষীরা ৪০-এর পরেই জীবনে সফলতার দেখা পেয়েছেন। এই টপিকটা নিয়ে অন্য দিন আলোচনায় আসবো। এবার আজকের টপিকে আসি । গুরুতবপূর্ণ আপডেটে পেতে Web Tech info Bangla পেজটি ফলো দিয়ে রখুন- ধন্যবাদ।
"কিছু মানুষের স্বভাবের কারণে সংসারে উন্নতি বাধাগ্রস্থ হয়। হাদিসে এসব কারণ বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। আসুন, জানি সংসারে উন্নতির পথে বাধা সৃষ্টি করার কারণগুলো।"
* সকালে দেরিতে করে ঘুম থেকে উঠা-
যেসব স্বভাবের কারণে সংসার উন্নতি হয় না তার অন্যতম একটি কারণ হলো সকালে দেরিতে করে ঘুম থেকে উঠা কারণ- সকাল সকাল ওঠে যে কোনো কাজ করায় রয়েছে বরকত। সংসারের জন্যও তা প্রযোজ্য। সকাল সকাল কাজ করার গুরুত্ব তুলে ধরে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন-
হে আল্লাহ! আপনি আমার উম্মতকে ভোরের (সকালের) বরকত দান করুন।’
তিনি কোনো ছোট কিংবা বড় বাহিনীকে কোথাও পাঠালে দিনের প্রথমভাগেই পাঠাতেন। (হাদিসটির) বর্ণনাকারী নিজে একজন ব্যবসায়ী ছিলেন। তিনি তার পণ্যদ্রব্য দিনের প্রথমভাগে (ভোরে) পাঠাতেন, ফলে তিনি সম্পদশালী হয়েছিলেন এবং এভাবে তিনি অনেক সম্পদের অধিকারী হয়েছিলেন।’ (আবু দাউদ ২৬০৬)
* ঘরের নারীরা নিজেদের বেশি বিচক্ষণ মনে করলে-
যেসব স্বভাবের কারণে সংসারে উন্নতি হয় না তার আর একটি কারণ হলো এমন অনেক সংসার আছে, যেখানে নারীরা নিজেদের পুরুষের চেয়ে বেশি বিচক্ষণ মনে করে। কেননা রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘কেয়ামতের আগে সমাজে নারীর শাসন চলবে।’ এমনটি হলে ওই সংসারে উন্নতি আসবে না।
* দুনিয়ার প্রতি বেশি ঝুঁকলে-
হজরত আনাস ইবনু মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আর যে ব্যক্তির একমাত্র চিন্তার বিষয় হবে দুনিয়া, আল্লাহ তাআলা সেই ব্যক্তির গরীবি ও অভাব-অনটন দুচোখের সামনে লাগিয়ে রাখবেন এবং তার কাজগুলো এলোমেলো ও ছিন্নভিন্ন করে দেবেন। তার জন্য যা নির্দিষ্ট রয়েছে, দুনিয়াতে সে এর চাইতে বেশি পাবে না।’ (তিরমিজি ২৪৬৫)
* ইচ্ছাকৃতভাবে দেরিতে নামাজ পড়লে-
যেসব স্বভাবের কারণে সংসারে উন্নতি হয় না তার গুরুত্বপূর্ণ একটি কারণ হলো ওয়াক্ত মত নামাজ না পড়া। যারা অলসতা করে সঠিক সময়ে নামাজ আদায় করে না, তাদের নামাজ কবুল হবে না। দুনিয়াতে তাদের সংসারেও উন্নতি হবে না। কেননা তারা নামাজ সম্পর্কে উদাসীন। তাদের জন্য পরকালে শাস্তি রয়েছে। মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এরপর দুর্ভোগ ওই সব মুসল্লির জন্য, যারা তাদের নামাজ সম্পর্কে উদাসীন।’ (সুরা মাউন: আয়াত ৪-৫)
* দুনিয়ার চিন্তায় পেরেশান হলে-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা বলেন, হে আদম সন্তান! আমার ইবাদতে মগ্ন হও।
আমি তোমার অন্তরকে ঐশ্বর্যমন্ডিত করবো এবং তোমার দারিদ্র দূর করবো। তুমি যদি তা না করো, তাহলে আমি তোমার অন্তর পেরেশানী দিয়ে পূর্ণ করবো এবং তোমার দরিদ্রতা দূর করবো না।’ (ইবনে মাজাহ ৪১০৭, তিরমিজি ২৪৬৬)
* ফজরের নামাজ কাজা করলে-
ফজরের নামাজ কাজা করলে রহমত থেকে বঞ্চিত হতে হয়। কারণ ফজরের নামাজ দিয়ে সকাল বেলা বরকত ও রহমতের দিন শুরু হয়। ফজরের নামাজ কাজা করায় সংসারের যাবতীয় রহমত থেকে বঞ্চিত হতে হয়।
* দান-সাদকাহ না করলে-
দান-সাদকায় সম্পদে বরকত হয়। তাই কেউ যদি দান-সাদকাহ না করে তবে তার সংসারেও উন্নতি হয় না। সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, উল্লেখিত কাজগুলোর ক্ষতি থেকে বিরত থাকা। কোরআন-সুন্নাহর উপর আমল করে সংসারের উন্নতিতে মনোযোগী হওয়া। মহান আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ক্ষতিকর যাবতীয় কাজ থেকে হেফাজত করুন। আমিন।
সংসারে উন্নতি না হওয়ার আরও ৭টি স্বভাব — যেসব অভ্যাস বদলানো জরুরি
সংসার সুখের হোক—এটা আমাদের সবার চাওয়া। কিন্তু অনেক সময় নিজের অজান্তেই কিছু আচরণ বা স্বভাব আমাদের পারিবারিক জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এই লেখায় এমন ৭টি স্বভাব তুলে ধরা হলো যা সংসারের উন্নতির পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
১. অহংকার ও ইগো
দাম্পত্য জীবনে নম্রতা একটি বড় গুণ। অহংকারী স্বভাব সম্পর্ককে দুর্বল করে তোলে এবং মনের দূরত্ব তৈরি করে। ভুল করলে তা স্বীকার করা এবং একে অপরকে সম্মান দেওয়াই উন্নতির চাবিকাঠি।
২. কৃতজ্ঞতার অভাব
পরিবারে একে অপরের ছোট ছোট কাজকে সম্মান না করলে ধীরে ধীরে ভালোবাসা কমে যায়। ‘ধন্যবাদ’, ‘তুমি পাশে থাকায় ভালো লাগে’ — এমন বাক্য সম্পর্ককে শক্ত করে তোলে।
৩. সন্দেহ ও অপবাদ
অতিরিক্ত সন্দেহ ও অপবাদ সংসার ধ্বংসের অন্যতম কারণ। বিশ্বাস ছাড়া কোনো সম্পর্ক টিকে না। এমন স্বভাব সংসারের উন্নতির বদলে ধ্বংস ডেকে আনে।
৪. দায়িত্বহীনতা
নিজের দায়িত্ব না নেওয়া, সবকিছু অন্যের ঘাড়ে ফেলে দেওয়া, পারিবারিক সিদ্ধান্তে উদাসীনতা ইত্যাদি সংসারকে অস্থির করে তোলে। পরিবার মানে পারস্পরিক দায়িত্ববোধ।
আরও পড়ুন : 🟢 ক্ষমা প্রার্থনা বা তওবার শ্রেষ্ঠ দোয়া সাইয়েদুল ইস্তেগফার বাংলা উচ্চারণ সহ ।
৫. রাগ সংবরণে অক্ষমতা
রাগের সময় বলা অনেক কথা গভীর ক্ষতের সৃষ্টি করে। রাগ কন্ট্রোল করতে না পারলে তা সম্পর্ক নষ্ট করে দেয়। ইসলামে রাগ কমানোর জন্য ওযু, নীরবতা বা স্থান পরিবর্তনের উপদেশ দেওয়া হয়েছে।
৬. অর্থনৈতিক অপচয়
অপরিকল্পিত খরচ, ঋণের বোঝা বা বিলাসিতা সংসারে অর্থনৈতিক সংকট ডেকে আনে। দাম্পত্য জীবনে বাজেট অনুসারে চলা এবং ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
৭. ধর্মীয় মূল্যবোধের অভাব
ইসলামিক মূল্যবোধ ছাড়া কোনো সংসার দীর্ঘস্থায়ী শান্তি পায় না। সালাত, আল্লাহভীতি, দোয়া, পরস্পরের হক আদায় ইত্যাদি বিষয়গুলো সংসারে উন্নতি আনে এবং কল্যাণ ধরে রাখে।
🔗 আরও পড়ুন:
- সংসার সুখী করার ১০টি ইসলামিক উপায়
- ‘না’ এর বদলে শিশুকে বলতে পারেন যে কথাগুলো ! শিশুর আদর-যত্ন (পর্ব- ২ ) Parenting Tips
📌 উপসংহার:
সংসারের উন্নতি কোনো ম্যাজিক নয়—বরং প্রতিদিনের ছোট ছোট ভালো অভ্যাসেই লুকিয়ে থাকে বড় সুখ। যদি এই ৭টি স্বভাব থেকে নিজেকে দূরে রাখা যায়, তাহলে ইনশাআল্লাহ পরিবারে আসবে সুখ, শান্তি ও বারাকাহ।
আপনার পরিবারে কোন বিষয়টা সবচেয়ে বেশি সমস্যা তৈরি করে বলে মনে করেন? নিচে কমেন্ট করে জানাতে পারেন।





















0 Comments